ক্লাউড কম্পিউটিং কি?

 ক্লাউড কম্পিউটিং কি?

মূলত ক্লাউড(cloud) শব্দের অর্থ হলো মেঘ। তাই অনেকে মনে করে থাকেন ক্লাউড কম্পিউটিং(cloud computing) মেঘের মাধ্যমে বা  সাহায্যে ডাটা স্টোর করার পদ্ধতি।


কিন্তু এই ধারণাটা একেবারেই ভুল। মেঘের সাথে আদৌও কোনো সম্পর্ক নেই ক্লাউড কম্পিউটিং(cloud computing) এর। তাই যারা এই ধারণা নিয়ে এখনো আছেন তাদেরকে আবারও বলছি মেঘের সাথে ক্লাউড কম্পিউটিং এর কোন সম্পর্ক নেই। 


ক্লাউড কম্পিউটিং
cloud computing


ক্লাউড কম্পিউটিং কি? 


সাধারণত আমরা ডাটা স্টোর করার জন্য কম্পিউটারের হার্ডডিক্স, মেমোরি কার্ড, পেন ড্রাইভ,CD,Dvd ইত্যাদি ব্যবহার করে থাকি।  আবার আমরা যখন অন্য কোথাও ওই ডাটা কে দেখতে চাই  তখন সাধারণত পেনড্রাইভ সিডি-ডিভিডি সাথে করে নিয়ে যেতে হয়। ওই ডাটা কে দেখার জন্য বা ওই ডেটা নিয়ে কাজ করার জন্য এটা করতে হয়। 


ক্লাউড কম্পিউটিং(cloud computing) এর ক্ষেত্রে ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে সংযুক্ত থাকা নির্দিষ্ট কোন কম্পিউটার সার্ভার এর মধ্যে ডেটা স্টোর করে রাখতে পারবেন আপনি। আর সাধারনত ওই ডাটা আপনি যেকোন কম্পিউটার বা মোবাইল ডিভাইস থেকে খুব সহজেই দেখতে পারবেন। এর জন্য আপনার যে জিনিসটা প্রয়োজন হবে সেটা হচ্ছে শুধু  ইন্টারনেট কানেকশন। 


আপনি ইন্টারনেট ব্যবহার করে যে কোন জায়গা থেকে বা যেকোনো স্থান থেকে আপনার সঞ্চিত ডাটা আপনি দেখতে পারবেন। সেই সাথে আরও ডাটা স্টোর করতে পারবেন সহজেই। আর এটির জন্য শুধু দরকার Internet কানেকশন আর সেই ইন্টারনেট কানেকশনের মাধ্যমে ইন্টারনেটের সাথে যুক্ত সেই কম্পিউটারে আপনি ডাটা স্টোর করতে পারবেন এবং ওই ডাটা দেখতেও পারবেন। 


আর তাছাড়া ওই ডাটা স্টোর করার জন্য আপনি যেই কম্পিউটার(Computer) ব্যবহার করবেন ওই কম্পিউটারের স্টোরেজ ব্যবহার না করেই। এর ফলে সাধারণত কি হবে আপনি যে কোন জায়গা থেকেই আপনার ডাটা এক্সেস করতে পারবেন। 


ক্লাউড কম্পিউটিং(cloud computing) কি মনে হয় এতক্ষণে আপনারা বুঝে গিয়েছেন।  তাহলে চলুন এবার জেনে নেওয়া যাক ক্লাউড কম্পিউটিং এর ব্যবহার সম্পর্কে-


ক্লাউড কম্পিউটিং এর ব্যবহারঃ 


ক্লাউড কম্পিউটিং এর ব্যবহার সাধারণত অনেক ভাবে করা যেতে পারে। যেমন-
  1. স্টোরেজ হিসেবে 
  2. হার্ডওয়ার হিসেবে 
  3. সফটওয়্যার সার্ভিস হিসেবে ইত্যাদি। 

স্টোরেজ হিসাবে ব্যবহার 


সাধারণত ক্লাউড কম্পিউটিং(cloud computing) স্টোরেজ হিসেবেও ব্যবহার করা যায়। যেমন -আপনি সাধারণত ফেসবুকের মধ্যে ছবি ভিডিও আপলোড করে রাখতে পারেন সেভাবে। যা মূলত ক্লাউড সার্ভার এর উদাহরণ। গুগল ড্রাইভে ও আপনারা ডাটা আপলোড করে রাখতে পারেন। গুগল ফটোতে ফটো আপলোড করে রাখতে পারেন স্টোরেজ হিসাবে এবং আপনি চাইলে যেকোন জায়গায় এটি ব্যবহার করতে পারেন। 



হার্ডওয়ার হিসেবে 


আমাদের মধ্যে অনেকেই আছেন যারা মনে করে থাকেন ক্লাউড-কম্পিউটিং(cloud computing) শুধু ডাটা স্টোর করার জন্য। ডাটা স্টোর করা ছাড়াও ক্লাউড কম্পিউটিং এর সাহায্যে আপনি যদি কোন গেম খেলতে চান, কিন্তু এই গেমটি খেলার জন্য হার্ডওয়ার রিসোর্সের (বেশি র্যাম, দামি সিপিইউ, দামি গ্রাফিক্স কার্ড) দরকার আর সেগুলো যদি না থাকে তাহলে আপনিও এই গেমটি ক্লাউড কম্পিউটিং এর সাহায্যে করতে পারেন।


আর এর জন্য শুধু আপনার কম্পিউটারে ইন্টারনেট কানেকশন দ্রুতগতির হওয়া দরকার। বাকি  গেমের প্রসেসিং যা কিছু হবে সেগুলো ক্লাউড কম্পিউটিং এর সার্ভার করবে এবং আপনি শুধুমাত্র গেমটি কন্ট্রোল করতে পারবেন ইন্টারনেটের দাঁড়া। 


সফটওয়্যার সার্ভিস 


মূলত এর অর্থ হল আপনার কাছে কোন ধরনের সফটওয়্যার নাই। কিন্তু আপনি ওই সফটওয়্যার টি ব্যবহার করতে চান। তাহলে ক্লাউড কম্পিউটিং(cloud computing) এর ভিতরে থাকা কম্পিউটারে থাকা ওই সফটওয়্যারটি ব্যবহার করতে পারেন।


তারপর ইন্টারনেট ব্যবহার করে ক্লাউড কম্পিউটিংয়ের থাকা সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারেন। উদাহরণ হিসেবে ধরুন-আপনার কম্পিউটারে ফটোশপ সফটওয়্যার নেই। কিন্তু আপনি ফটোশপ ব্যবহার করতে চান তাহলে কিভাবে করবেন?আপনি তখন ক্লাউড সার্ভারে থাকা ওই ফটোশপ সফটওয়্যার ব্যবহার করতে পারবেন। 


cloud computing


ক্লাউড কম্পিউটিং(cloud computing) কত প্রকারের হয়ে থাকে 


ক্লাউড কম্পিউটিং সাধারণত চার প্রকারের হয়ে থাকে। যেমনঃ


  1. পাবলিক ক্লাউড 
  2. প্রাইভেট ক্লাউড 
  3. হাইব্রিড ক্লাউড 
  4. কমিউনিটি ক্লাউড 


পাবলিক ক্লাউডঃ পাবলিক ক্লাউডের অনেক ধরনের সুবিধা রয়েছে। পাবলিক ক্লাউডের সবচেয়ে বড় সুবিধা হল এখান থেকে যে কেউ তার ডাটা দেখতে পারবেন। 


প্রাইভেট ক্লাউডঃ প্রাইভেট ক্লাউডে যদি কেউ দেখে থাকেন শুধুমাত্র সেই সেই যেটা দেখতে পারবেন। যেমন ধরুন গুগোল ড্রাইভ, গুগোল ফটো, এইখানে যদি আপনি কোন ডেটা রাখেন তাহলে আপনি নিজের ইমেইল আইডি দ্বারা সেটা লগইন করে দেখতে পারবেন। 


হাইব্রিড ক্লাউডঃ হাইব্রিড ক্লাউড হলো এখানে সাধারণত কিছু ডেটা পাবলিক আবার কিছু টাটা প্রাইভেট। যেমন ধরুন ফেসবুকে আপনি ফটো আপলোড করলে সেটা সবাই দেখতে পারবে। এখানে চাইলে কিছু ডাটা আপনি প্রাইভেট করেও রাখতে পারবেন।


কমিউনিটি ক্লাউডঃএটি সাধারণত একটি নির্দিষ্ট কমিউনিটির ক্লাউড। যেমন ধরুন-স্কুল-কলেজের সবাই ব্যবহার করতে পারবে এরকম কোন ক্লাউড সিস্টেম যেখানে ওই স্কুলের সবাই ব্যবহার করতে পারবে। 


ক্লাউড কম্পিউটিং কি?


ক্লাউড কম্পিউটিং এর সুবিধা সমূহঃ 


ক্লাউড কম্পিউটিং এর অনেক সুবিধা রয়েছে। নিচে কয়েকটি গুরুত্বপূর্ণ সুবিধা সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-


কম ইনফ্রাস্ট্রাকচার এর প্রয়োজনঃ আপনি যদি কোন কোম্পানির শুরু করেন তাহলে সমস্ত ডাটা স্টোর করার জন্য আলাদা করে ডাটা রিস্টোর এর জন্য আলাদা করে কোনো ইনফ্রাস্ট্রাকচার এর দরকার নেই। আপনি সাধারণত এখানে ক্লাউড কম্পিউটিং এর সাহায্য নিয়ে ডেটা স্টোর করতে পারবেন। 


কম হার্ডওয়ারের প্রয়োজনঃ আপনি যদি কোন গেম বা ভারী কোন সফটওয়্যার চালাতে যান এর জন্য আপনার সাধারণত হাই কনফিগারেশন Computer এর পড়ে কিন্তু আপনার যদি হাই কনফিগারেশন কম্পিউটার নাও থাকে তাহলে আপনি ইন্টারনেটের মাধ্যমে ক্লাউড কম্পিউটিং এর সাহায্য নিয়ে গেম খেলতে পারবেন।


সফটওয়্যার সমাধানঃ যদি আপনার কোন সফটওয়্যার দরকার পড়ে থাকে এবং আপনার কম্পিউটারের যদি সেই সফটওয়ারটি না থাকে তাহলে আপনি ক্লাউড কম্পিউটিং এর মাধ্যমে সেই সফটওয়্যারটি ব্যাবহার করতে পারবেন।


ডাটা স্টোরেজ সুবিধাঃ আপনি এখানে চাইলেই ডাটা স্টোর  করে রাখতে পারবেন এবং যেকোন স্থান থেকে ওই ডাটা এক্সেস করতে পারবেন। আপনি এই ক্ষেত্রে এখানে যেমন টাকা দেবেন তেমন ভোগ করতে পারবেন।


সহজেই স্টোরেজের পরিমাণ কমাতে বা বাড়াতে পারবেনঃ আপনি এখানে চাইলে খুব সহজেই স্টোরেজের পরিমাণ কমাতে বা বাড়াতে পারবেন। সহজ কথায় বলতে গেলে যদি বেশি স্টোরেজের প্রয়োজন হয় আপনার তাহলে সেটি আপনি বাড়াতে পারবেন এবং আপনার যদি কোন স্টোরেজের দরকার হয় তাহলে আপনি সেটি কমাতে পারবেন। এই ক্ষেত্রে আলাদা করে আপনার হার্ডডিস্ক কেনার প্রয়োজন নেই। 


ডাটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে নাঃ ক্লাউড কম্পিউটিং এর আরেকটি বড় সুবিধা হলো এখানে ডাটা নষ্ট হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে না। অর্থাৎ আপনি যদি ক্লাউড কম্পিউটিংয়ে ডাটা রাখেন তাহলে ওই ডেটা স্টোর করে রাখার দায়িত্ব আপনার নয়।


সেই কোম্পানি ওই দায়িত্ব বহন করে থাকবে। অর্থাৎ ওই ডাটা সেন্টারে যদি আগুন ধরে যায় তাও কোম্পানির দায়িত্ব থাকবে আপনার ডাটা সুরক্ষিত রাখার। কেননা সেসব কোম্পানিগুলো অনেক আলাদা আলাদা জায়গা গুলোতে আপনার ডাটার ব্যাকআপ রাখে। 


ক্লাউড কম্পিউটিং এর অসুবিধাসমূহঃ


ক্লাউড কম্পিউটিং এর যেমন রয়েছে অসংখ্য সুবিধা তেমনি এর কিছু অসুবিধাও রয়েছে। ক্লাউড কম্পিউটিং এর কিছু অসুবিধা সমূহ নিচে দেওয়া হলঃ


নির্ভরতাঃ সাধারণত এর মাধ্যমে ক্লাউড কোম্পানির ওপর আমাদের নির্ভর করে থাকতে হয়। তাই এক্ষেত্রে যদি ক্লাউড কোম্পানি তাদের প্যাকেজের দাম বৃদ্ধি করে থাকে তাহলে আমাদের সেই দাম দিতে হয়। তা ছাড়া অন্য কোন কোম্পানি যদি নিয়ম পরিবর্তন করে তাহলে তাও আমাদের মেনে নিতে হয়। 


কম নিয়ন্ত্রণঃ সাধারণত এই ক্ষেত্রে সার্ভারের নিয়ন্ত্রণ অনেক কম। যা আমাদের সার্ভিস কোম্পানিগুলো প্রদান করে থাকে সেগুলোই আমাদের ব্যবহার করতে হয়। 


সিকিউরিটিঃ আপনি এখানে সমস্ত ডাটা কোম্পানির সার্ভারে রাখছেন, তাই ওই কোম্পানি আপনার ডাটাগুলোকে অন্যকোন ভাবে ব্যবহার করতে পারে। তাই এক্ষেত্রে সিকিউরিটি সমস্যাটা থেকে যায়। যদিও বেশির ভাগ ক্লাউড কোম্পানি বেশ নামিদামি হয়ে থাকে তাই এদের অনেকাংশে বিশ্বাস করা যেতে পারে। 


ক্লাউড কোম্পানির কয়েকটি বড় সংস্থার নামঃ 


মাইক্রোসফট, Google, Facebook, Amazon ছাড়াও বিভিন্ন আরো অনেক বড় বড় কোম্পানির ক্লাউড কম্পিউটিং(cloud computing) সুবিধা রয়েছে। 


যেমন গুগলের গুগোল ড্রাইভ, গুগোল ফটো মাইক্রোসফট এর অনড্রাইভ এগুলো হলো সাধারণত ক্লাউড স্টোরেজের সুবিধা। 


তাছাড়া ফেসবুকও ক্লাউড স্টোরেজ সুবিধা দিয়ে থাকে যেমন ধরুন আপনি ফেসবুকে বিভিন্ন ধরনের ফটো বা ভিডিও আপলোড করে রাখতে পারেন। তাছাড়া বিখ্যাত ই-কমার্স ওয়েবসাইট অ্যামাজনের ক্লাউড পরিসেবা রয়েছে। 


আর ও পড়তে নিচের দেয়া লিঙ্কে ক্লিক করুন-

বন্ধুরা, ক্লাউড কম্পিউটিং কি? যদি আর্টিকেলটা আপনার উপকারে এসে থাকে তাহলে অবশ্যই আপনার বন্ধুদের মাঝে শেয়ার করবেন। 

আমাদের সম্পর্কে জানতে এখানে ক্লিক করুন
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post