ক্যাপাসিটর (Capacitor) কি?

ক্যাপাসিটর (Capacitor) কি?

ক্যাপাসিটর (Capacitor) কি? ক্যাপাসিটর (Capacitor) আবিষ্কারের ইতিহাস। ক্যাপাসিটর (Capacitor) কি?। ক্যাপাসিটর (Capacitor) কিভাবে কাজ করে?

হ্যালো বন্ধুরা আজকে আমরা জানবো ক্যাপাসিটর সম্পর্ক। ক্যাপাসিটর কিভাবে আবিষ্কার হল, ক্যাপাসিটর কি? ক্যাপাসিটর কিভাবে কাজ করে এবং ইলেকট্রনিক সার্কিট ক্যাপাসিটর কেন ব্যবহার করা হয়, ইত্যাদি সকল প্রশ্নের উত্তর আমরা এই পোষ্টের মাধ্যমে জেনে নেব। তাহলে চলুন প্রথমে জেনে নেই এর সংক্ষিপ্ত ইতিহাস।

ক্যাপাসিটর কি? আর্টিকেলটি পড়লে আপনারা যা যা জানতে পারবেন তা নিচে দেয়া হল-

  1. ক্যাপাসিটর (Capacitor) কি?
  2. ক্যাপাসিটর এর ইতিহাস।
  3. ক্যাপাসিটর (Capacitor) এর একক কি?
  4. ক্যাপাসিট্যান্স (Capacitance) কি?
  5. ১ ফ্যারাড বলতে কি বুঝায়? 
  6. ক্যাপাসিটর কত প্রকার কি কি?
  7. সার্কিটে ক্যাপাসিটরের কাজ কি?
  8. বিভিন্ন ধরনের ক্যাপাসিটর
  9. ক্যাপাসিটর(Capacitor) এর কিছু বৈশিষ্ট
  10. ক্যাপাসিটর ব্যাংক কি?
  11. ক্যাপাসিটর ব্যাংক কেন ব্যবহার করা হয়?
  12. সিলিং ফ্যানে কেন ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা হয়?
  13. ক্যাপাসিটর পিএফ(PF) মান কিভাবে নির্ণয় করা হয়?
ক্যাপাসিটর (Capacitor) কি?

ক্যাপাসিটর এর ইতিহাস।

১৭৪৫ সালে হল্যান্ডের ইউনিভার্সিটি অফ লিডেন  এর একটি ল্যাব এ জার্মান বিজ্ঞানী জর্জ ভন ক্লেইস্ট (George Von Kleist) একটি গবেষণা চালাচ্ছিলেন। সেই গবেষণায় একটি জার এর মধ্যে একটি পাট এবং ইলেক্ট্রোলাইট রেখে পৃথিবীর সর্বপ্রথম ক্যাপাসিটরের তত্ত্ব আবিষ্কার করেন। যার নাম তিনি দিয়েছিলেন লিডেন জার (Leyden Jar) 



জর্জ ভন ক্লেইস্ট (George Von Kleist)

ঠিক তার এক বছর পড়ে (১৭৪৬ সালে) আর একজন বিজ্ঞানী যার নাম পিটার ভ্যান মুসচেনব্রক (Pieter van Musschenbroek) লিডেন জার (Leyden Jar) কিছুটা পরিবর্তন করে ক্যাপাসিটর বানিয়ে ফেলেন।



ক্যাপাসিটর এর আবিষ্কারক

জর্জ ভন ক্লেইস্ট (George Von Kleist) &
পিটার ভ্যান মুসচেনব্রক (Pieter van Musschenbroek


ক্যাপাসিটর আবিষ্কারে এই দুইজন ব্যক্তির অবদান অপরিসীম। কারণ এই দুজন ব্যক্তি সর্বপ্রথম ক্যাপাসিটর এর ধারণা থেকে ক্যাপাসিটর কে আবিষ্কার করেন। এবং ইলেকট্রনিক সার্কিট এ বর্তমানে বহুল ব্যবহৃত হয়ে থাকে ক্যাপাসিটর


ক্যাপাসিটর (Capacitor) কি?

এটি মূলত বৈদ্যুতিক চার্জ সঞ্চয়ক যন্ত্র-বিশেষ। এর বাংলা অর্থ “ধারক”। দুটি পরিবাহী পাতের মাঝে অপরিবাহী বা ডাই-ইলেকট্রিক (Dielectric) পদার্থ রেখে প্লেট দ্বয় কে পৃথক ভাবে স্থাপন করে যে ডিভাইস তৈরী হয় তাকে ক্যাপাসিটর(Capacitor) বলে। 

ক্যাপাসিটর (Capacitor) এর একক কি?

ক্যাপাসিটর এর একক হচ্ছে মাইক্রোফ্যারাড μF

ক্যাপাসিটর এর প্রতীক 

capacitor symbol
Capacitor Symbol

ক্যাপাসিট্যান্স (Capacitance) কি?

ক্যাপাসিটর হলো ডিভাইস বা সার্কিটের উপাদান এবং ক্যাপাসিট্যান্স হলো উক্ত ডিভাইসের বৈশিষ্ট বা গুণ, কোন ক্যাপাসিটরের ডাই-ইলেকট্রিক পদার্থের চার্জ ধারণ করার সামর্থ্যকে ক্যাপাসিট্যান্স বলা হয়।


১ ফ্যারাড বলতে কি বুঝায়?

কোন চার্জ বিহীন ক্যাপাসিটরের আড়াআড়িতে ১ ভোল্ট বিভব পার্থক্য প্রয়োগ করলে ক্যাপাসিটরটি যদি ১ কুলম্ব চার্জ সংরক্ষণ করতে পারে তবে উক্ত ক্যাপাসিটরের ধারণ ক্ষমতাকে ১ ফ্যারাড বলা হয়।


ক্যাপাসিটর কত প্রকার কি কি?

  1. ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটর
  2. সিরামিক ক্যাপাসিটর
  3. পরিবর্তনশীল ক্যাপাসিটর

ইলেকট্রোলাইটিক ক্যাপাসিটরঃ এই ক্যাপাসিটর উচ্চ ধারকত্ব-র বা  অধিক পরিমাণে চার্জ সঞ্চিত করতে পারে এ জন্য এই ক্যাপাসিটর সব চেয়ে বেশি ব্যবহৃত হয়। রেডিও-র ফিল্টার বাই পাস সার্কিটে ব্যবহৃত হলে ও  এসি (AC) সার্কিটে ব্যবহার করা যায় না। এই ধরনের ক্যাপাসিটর ডিসি সার্কিট এ ব্যবহৃত হয়। 


সিরামিক ক্যাপাসিটরঃ এতে সিরামিক ডাই-ইলেকট্রিক হিসেবে ব্যবহৃত হলেও এদের ধারকত্ব বা চার্জ সঞ্চিত করার ক্ষমতা খুবই কম। মাত্র 1pF থেকে 100pF এবং সর্বোচ্চ সহনীয় ক্ষমতা ৫০০ ভোল্ট পর্যন্ত। মূলত কাপলিং-ডিকাপলিং বাই পাস সার্কিটের এটি ব্যবহৃত হয়।


পরিবর্তনশীল বায়ু ক্যাপাসিটরঃ পরিবর্তনশীল ক্যাপাসিটর এর মান প্রয়োজন মত বাড়ানো এবং কমানো যায়। এতে অনেকগুলো অর্ধবৃত্তাকার সমান্তরাল অ্যালুমিনিয়ামের পাত দুভাগে ভাগ করে বসান থাকে। পাতগুলোর মাঝে বায়ু ডাই-ইলেক্ট্রিক মাধ্যম হিসেবে কাজ করে। টিউনিং সার্কিট হিসেবে এদের ব্যবহার করা হয়।

সার্কিটে ক্যাপাসিটরের কাজ কি?

ক্যাপাসিটর একটি বর্তনী বা সার্কিটে যুক্ত হয়ে ঐ বর্তনী বা সার্কিটের জন্য প্রয়োজনীয় চার্জ কে ধরে রাখে একটি নির্দিষ্ট সময়ের জন্য। এই সময় টি খুব অল্প সময় হয়ে থাকে। আবার যখন ডিসচার্জ  করার সময় হয়ে আসে তখন এরা ডিসচার্জ হয়ে যায়। 


বিভিন্ন ধরনের ক্যাপাসিটর


বিভিন্ন ধরনের ক্যাপাসিটর


ক্যাপাসিটর (Capacitor) এর একক কি?


ক্যাপাসিটর এর একক হচ্ছে মাইক্রোফ্যারাড μF,


ব্যবহারিক ক্ষেত্রে ফ্যারাড খুব বড় হয় বলে এর ১০ লক্ষ ভাগের এক ভাগকে ধারকত্বের আর একটি নতুন একক ধরা হয়। এর নাম মাইক্রো-ফ্যারাড । একে সংক্ষেপে μF দ্বারা প্রকাশ করা হয় ।


  • ১ ফ্যারাড (F) = ১০ মাইক্রো-ফ্যারাড (μF)

  • ১ মাইক্রো-ফ্যারাড (μF) = ১০−৬ ফ্যারাড (F)


এছাড়াও ন্যানো-ফ্যারাড (nF) এবং পিকো-ফ্যারাড (pF) নামে আরও ব্যবহারিক একক আছে । পিকো-ফ্যারাড (pF) কে মাইক্রো-মাইক্রো-ফ্যারাড (μμF) ও বলা হয় ।


  • ১ ফ্যারাড (F) = ১০ ন্যানো-ফ্যারাড (nF)
  • ১ ন্যানো-ফ্যারাড (nF) = ১০−৯ ফ্যারাড (F)
  • ১ ফ্যারাড (F) = ১০১২ পিকো-ফ্যারাড (pF)
  • ১ পিকো-ফ্যারাড (pF) = ১০−১২ ফ্যারাড (F)

সিরিজ এবং প্যারালাল কানেকশন  এ ক্যাপাসিটর এর প্রয়োজনীয় সূত্র সমূহ

ক্যাপাসিটর সূত্র
সিরিজ এবং প্যারালাল কানেকশন  এ ক্যাপাসিটর এর প্রয়োজনীয় সূত্র সমূহ


ক্যাপাসিটর(Capacitor) এর কিছু বৈশিষ্টঃ

  1. ক্যাপাসিটর এসি(AC) কারেন্টকে শর্ট করে এবং ডিসি(DC) কারেন্টকে ব্লক করে। অর্থাত ক্যাপাসিটরের মধ্য দিয়ে এসি(AC) কারেন্ট প্রবাহিত হয় কিন্তু ডিসি(DC) প্রবাহিত হয়না।
  2. ইহা বৈদ্যূতিক চার্জকে(C) ধারণ করতে পারে।
  3. ইহা প্যাসিভ ডিভাইস অর্থাত এর গেইন সৃস্টির ক্ষমতা নেই।
  4. চার্জ সর্বদা প্লেটে সঞ্চয় হয়।
  5. ক্যাপাসিটরের মধ্য দিয়ে চার্জিং এবং ডিসচার্জিং প্রক্রিয়ার মাধ্যমে এসি (AC) কারেন্ট প্রবাহিত হয়, কখনোই ডাইইলেকট্রিক পদার্থের মধ্য দিয়ে কারেন্ট প্রবাহিত হয় না।
  6. প্লেটসমূহের দূরত্ব বাড়লে চার্জসমূহের মধ্যে আকর্ষণ বল কমবে ক্যাপাসিট্যান্স কমবে এবং দূরত্ব কমলে আকর্ষণ বল বাড়বে ক্যাপাসিট্যান্স বাড়বে

ক্যাপাসিটর ব্যাংক কি?


একাধিক ক্যাপাসিটর (Capacitor) কি সিরিজ এবং প্যারালাল কানেকশন এর মাধ্যমে একত্রিত করা হলে তাকে ক্যাপাসিটর (Capacitor) ব্যাংক বলা হয়। 


ক্যাপাসিটর ব্যাংক কেন ব্যবহার করা হয়? 


ডিস্ট্রিবিউশন ভোল্টেজ লস কমানোর জন্যই এই ক্যাপাসিটর (Capacitor) ব্যাংক ব্যবহার করা হয়। এছাড়াও তার আরো একটি গুরুত্বপূর্ণ কাজ আছে তা হল সিস্টেমের পাওয়ার ফ্যাক্টর ইম্প্রুভ করা।


সিলিং ফ্যানে কেন ক্যাপাসিটর ব্যবহার করা হয়?


সিলিং ফ্যান চালু হবার জন্য প্রয়োজনীয় টর্ক বা ঘূর্ণন প্রবণতা সৃষ্টি করার জন্য সিলিং ফ্যানের ক্যাপাসিটর (Capacitor) ব্যবহার করা হয়। সিলিং ফ্যান ইন্ডাকশন মোটর এর মতই কাজ করে। সিলিং ফ্যানের দুইটি কয়েল স্টাটিং কয়েল এবং একটি রানিং কোয়েল। স্টারটিং ওয়াইন্ডিং এর সাথে ক্যাপাসিটর (Capacitor) টি সিরিজে লাগানো থাকে।


ক্যাপাসিটর পিএফ(PF) মান কিভাবে নির্ণয় করা হয়?


ক্যাপাসিটর (Capacitor) পিএফ মান সাধারণত তিনটি সংখ্যা দিয়ে প্রকাশ করা হয়। সবার শেষের যে সংখ্যা থাকে ততটি শূন্য বসাতে হয়।


একটি উদাহরণ দিয়ে পরিষ্কার হওয়া যাক। যদি একটি ক্যাপাসিটর (Capacitor) এর পিএফ(PF) মান ১০১ দেয়া থাকে তাহলে-


১০১  = ১০০ পিএফ(PF)

১০২ = ১০০০ পিএফ(PF)

১০৫ = ১০০০০০০০ পিএফ(PF)



আর ও পড়তে নিচের দেয়া লিঙ্কে ক্লিক করুন-

  1. গ্রাফিক্স ডিজাইন নিয়ে সকল প্রশ্নের উত্তর
  2. ফ্রিল্যান্সিং কি? ফ্রিল্যান্সিং এর A টু Z গাইডলাইন
  3. আপনি কি একজন ওয়েব ডেভলপার (Web Developer) হতে চান?



সবাই আর্টিকেলটি পড়ে কিছুটা ক্যাপাসিটর এর ধারণা পেলে আর্টিকেলটি শেয়ার করবেন এবং কোথাও বুঝতে সমস্যা হলে নিচে কমেন্ট করে জানাবেন, আপনারা কি ধরনের পোস্ট পড়তে চান কোমেন্টে জানাবেন অবশ্যই।
সবাইকে ধন্যবাদ। 
হোম এ ফিরে যেতে এখানে ক্লিক করুন
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post